সুনামগঞ্জের দিরাই প্রেসক্লাব নির্বাচন-২০২৫ স্থগিত করা হয়েছে। দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক দিরাই প্রেসক্লাবের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তিন প্রার্থীকে ফ্যাসিস্ট দাবী করে তাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবীতে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেন সভাপতি প্রার্থী শামসুল ইসলাম সরদার খেজুর ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইমরান হোসাইন। এ নিয়ে সাংবাদিকদের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ পরিস্থিতিতে প্রেসক্লাবের ঐক্য ও সৌহার্দপূর্ণ সম্প্রীতি বজায় রাখতে লিখিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। গত ১১ জুন ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। প্রেসক্লাবের একটি অংশ দাবি করছে- তারা ফ্যাসিবাদমুক্ত, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রেসক্লাব গঠনের জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রেসক্লাবের সভাপতি পদপ্রার্থী শামসুল ইসলাম সরদার এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমরান হোসাইন নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ তিনজন প্রার্থী—জিয়াউর রহমান লিটন, আবু হানিফ ও প্রশান্ত সাগর দাস—এর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে একতরফাভাবে নির্বাচন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ বিষয়ে শামসুল ইসলাম সরদার খেজুর বলেন,
আমরা গণতান্ত্রিকভাবে একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত প্রেসক্লাব চেয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট তিন প্রার্থী অংশ নিলে তাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি করি। কমিশন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে একপক্ষীয় নির্বাচন করতে চাইলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইমরান হোসাইন জানান, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। একটি মহল বিএনপির কিছু নেতাদের নামে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে প্রেসক্লাবের নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি রাজনৈতিক রূপ দিতে অপচেষ্টা করেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এরআগে ৫ জুন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাকারিয়া হোসেন জুসেফ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর বিভিন্ন অনিয়ম ও অস্পষ্ট প্রার্থিতা নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। অভিযোগ ওঠে—মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করেও প্রার্থিতা দেওয়া হয়েছে কিছু প্রার্থীকে। যার লিখিত ব্যাখা চাইলে কমিশন তা দিতে ব্যর্থ হয়।
ইমরান বলেন, ফ্যাসিস্টদের নিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ূম বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করলেও কোনো সমাধান হয়নি। জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সংঘাত এড়াতে বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতারা নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন স্থগিত করার আহ্বান জানান। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত করে লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেন।
এই ঘটনাকে ঘিরে দিরাইয়ে রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ এবং সচেতন মহল আশা করছেন, সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে দিরাই প্রেসক্লাব শিগগিরই গণতান্ত্রিক ও নিরপেক্ষ নেতৃত্ব পাবে।