বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু চোরাচালান কোনো নতুন ঘটনা নয়। প্রায় প্রতি রাতেই বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) অভিযান চলে, আটক করা হয় ভারত থেকে আনা বিপুল পরিমাণের গরু। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—এই চোরাচালান কারা করে? কেন তাদের ধরা যায় না? সাধারণ মানুষের মাঝে গুঞ্জন উঠেছে, চোরাচালানকারীরা কি সত্যিই পালিয়ে যাচ্ছে, নাকি তাদের পালাতে সহযোগিতা করা হচ্ছে?
বিজিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানবিরোধী অভিযান চালায়। এতে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় গরু, বিভিন্ন অবৈধ পণ্যসহ বহু মালামাল জব্দ করা হয়। কিন্তু আশ্চার্য্যের বিষয়, এই চোরাচালানকারীকে আটক করা যায় না। বিজিবি দাবি করে, অভিযানের সময় তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কিভাবে বার-বার একই কায়দায় চোরাচালানকারীরা পালিয়ে যেতে পারে?
স্থানীয় অনেকের দাবি, এই চোরাচালানের সঙ্গে প্রভাবশালী একটি চক্র জড়িত, যারা প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের হাত করে নিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, হয়তো অভিযানের আগেই চোরাচালানকারীদের তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়, ফলে তারা পালানোর সুযোগ পায়। তবে এ ব্যাপারে বিজিবি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, ভারত থেকে গরু আনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় থাকে। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় দালালরা গরু সরবরাহ করে, আর এপারে অপেক্ষায় থাকে বাংলাদেশি সিন্ডিকেট। বিজিবি কখনো কখনো গরু আটক করতে পারলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর কিছু মানুষও এই কাজে যুক্ত হয়, যারা স্বল্প পারিশ্রমিকে গরু পার করে দেয়।
বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা প্রতিটি অভিযানে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করি। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করা। তবে সীমান্ত এলাকা বিশাল, আর অপরাধীরা নানা কৌশল অবলম্বন করে পালিয়ে যায়। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি তাদের ধরতে।
সীমন্ত চোরাচালান রোধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু গরু আটক করলেই হবে না, বরং এই চক্রের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি চালানো হলে অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ হবে।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, চোরাচালান বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে দেশের অর্থনীতি সুরক্ষিত থাকে এবং সীমান্ত এলাকা নিরাপদ হয়। বিজিবি শুধু গরু নয়, মূল অপরাধীদেরও ধরবে—এমনটাই আশা করছে জনগণ।